উখিয়ায় তরুণেরা মাছ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •

গোরাইয়ারদ্বীপ এলাকার তরুণ আলাউদ্দিন সিকদারের মৎস্য চাষের পুকুর।

উখিয়ার গোরাইয়ারদ্বীপ এলাকার তরুণেরা মৎস্য চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন আলাউদ্দিন সিকদার।

তার মৎস্য চাষের পাশাপাশি হাঁস,মুরগি ও ছাগল পালন করে অভাবনীয় সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।

মৎস্য চাষের পুকুর পাড়ে রোপন করেছেন কলা গাছ। পুকুর পাড়ে তৈরি করেছেন হাঁস-মুরগি, কবুতর ও ছাগলের খামার। পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে হাঁসের বিচরণ দেখতে বড়ই চমৎকার।

সবুজ পাতার নিচে বাঁশের মাঁচায় থোকায় থোকায় ঝুঁলছে বিভিন্ন ফল, যা দেখে যেকোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে যাবে। আর এ দৃশ্য চোখে পড়ে রেজু খালঘেষা উখিয়া গোরাইয়ারদ্বীপ এলাকায়।

হাঁস,দেশি মুরগি, কবুতর, ছাগল, ও ফল এবং নানাজাতের মাছ বিক্রি করে বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা আলাউদ্দিন সিকদার। তিনি বলেন, শুধু মাছ বিক্রি করে পেয়েছি দু লাখ টাকা।

চাকরির পিছনে না ঘুরে গরু-ছাগলের খামার, শাক-সবজি ও মাছ চাষ করে দেশে অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছেন। আমি অনেক বছর বিদেশ ছিলাম। বিদেশ থেকে এসে নিজের জায়গায় মাছ চাষ শুরু করি।

আমাকে মাছ বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যেতে হয়না। যেদিন মাছ ধরি সেদিন মাছ ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যায়। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে জনসংখ্যা বেড়েছে। সুতরাং চাহিদাও কম না।

একটু আন্তরিকতা এবং সততা থাকলে যে কোন ব্যবসায় সফলকাম হওয়া যায়। বিদেশের টাকা দেশেও আয় করা যায়।

একই এলাকার শিক্ষিত যুবক সেলিম উদ্দিন সিকদার বলেন, বড় ভাই, আলা উদ্দিন সিকদারের মাছ চাষ দেখে আমি উৎসাহিত হই। অনেকবার চেষ্টা করেছি এনজিওতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি চাকরি নেয়ার। সেখানে আমাদের মতো স্থানীয় যুবকের চাকরি নেই। চাকরির নামে এনজিওরা প্রহসন করে।

এনজিও কর্তাবাবুরা তাদের আত্নীয় স্বজনদের এনে চাকরি দেয়। আর আমাদের সাথে করে প্রহসন। তাই আর চাকরির পিছনে না ঘুরে বড় ভাই আলা উদ্দিন সিকদারের মতো আমিও মাছ চাষ শুরু করেছি। গোরাইয়ারদ্বীপ জামে মসজিদ পুকুরে আমি মাছ চাষ করছি। মাছ চাষ করে আলা উদ্দিন সিকদার যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।আশা রাখি আমিও মাছ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার রঙিন স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবো। এলাকার বাইরে থেকেও অনেক বেকার শিক্ষিত যুবকেরা আলা উদ্দিন সিকদারের প্রজেক্ট দেখতে আসছেন। তারাও মৎস্য চাষ ও বিভিন্ন ফলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এতে আলা উদ্দিন সিকদারও খুশি।

স্থানীয় যুবক সালাহ উদ্দিন সিকদার জানান, আলা উদ্দিন সিকদার ও সেলিম উদ্দিন সিকদারের মতো আরও অনেকেই এই এলাকায় মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন বাগানের মাধ্যমে আমরা ফরমালিনমুক্ত সু-স্বাদু মাছ, দেশি মুরগি, হাঁস, কবুতর, ছাগল ও বিভিন্ন প্রকারের ফল খেতে পারছি। স্থানীয় বাজারে এসব সরবরাহ বাড়ায় দামও চলে এসেছে ক্রেতার নাগালের মধ্যে।

এখানকার যুবদের সাথে স্থানীয় মেয়েরাও তাদের বাড়ির আঙিনায় নানান জাতের মরিচ ও শাক-সবজি ফলান। ফলে তাদের বাজার থেকে অনেক কিছুই কিনতে হয় না। এখন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি এখনও ২০০ টাকার ওপরে। সমাজ সেবক এন আলম বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি।

এই প্রবাদের বাস্তব চিত্র দেখতে চাইলে যেতে হবে পাহাড় ও রেজু খাল বেষ্টিত চমৎকার গ্রাম উখিয়া হলদিয়া পালং ইউনিয়নের গোরাইয়ারদ্বীপে।

মাছ চাষে সফল উখিয়া রাজাপালং এলাকার নুরুল কবির মাহমুদ বলেন, নিজের কাজের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই। আমিও দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ ও বিভিন্ন ফলের বাগান করে আসছি। বর্ষা মৌসুমে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। আলো বাতাস ও পর্যাপ্ত রোদের তাপ থাকে এমন জায়গাতে রোপন করলে ফলের স্বাদের মিষ্টতা পাওয়া যায় বেশি।

গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার দিয়ে গাছ রোপন করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে গাছের এবং মাছের যত্ন নিতে হবে। আমরা তো গাছ কর্তন করি লাগায় না। তাই সবার উচিত গাছ লাগায় পরিবেশ বাঁচাই এবং মাছ চাষ করি সু-স্বাস্থ্য গড়ি।